Type Here to Get Search Results !

Hajr e aswad stone history_ হাজরে আসওয়াদের ইতিহাস

 



হাজরে আসওয়াদ (الحجر الأسود) হলো একটি পবিত্র কালো পাথর, যা পবিত্র কাবার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত। এটি মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ এবং বরকতময় একটি নিদর্শন।

হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচে দেওয়া হলো:

১. শাব্দিক অর্থ ও উৎস

অর্থ: আরবি ভাষায় 'হাজর' মানে পাথর আর 'আসওয়াদ' মানে কালো। অর্থাৎ এর অর্থ কালো পাথর

উৎস: ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, এই পাথরটি জান্নাত থেকে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছিল। হাদিস অনুযায়ী, শুরুতে এটি দুধের মতো সাদা ছিল, কিন্তু মানুষের পাপ স্পর্শ করতে করতে এটি কালো হয়ে যায়।

২. ইতিহাস ও গুরুত্ব

স্থাপনা: হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.) যখন কাবা ঘর নির্মাণ করছিলেন, তখন ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) জান্নাত থেকে এই পাথরটি নিয়ে আসেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অবদান: কাবার পুনর্নির্মাণের সময় গোত্রগুলোর মধ্যে পাথরটি স্থাপন নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছিল। তখন মহানবী (সা.) তাঁর চাদরে পাথরটি রেখে সব গোত্রের নেতাদের দিয়ে চাদর ধরিয়ে পাথরটি নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করে একটি বড় রক্তপাত ও বিবাদ মিটিয়েছিলেন।

ইবাদতের অংশ: হজের সময় তাওয়াফ (কাবার চারদিকে ঘোরা) শুরু এবং শেষ হয় এই পাথরটিকে কেন্দ্র করে। হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা বা সেদিকে ইশারা করা সুন্নাত।

৩. বর্তমান অবস্থা

সুরক্ষা: পাথরটি বর্তমানে একটি রুপার ফ্রেমে বাঁধানো অবস্থায় আছে। কয়েকশ বছর আগে বিভিন্ন ঘটনার কারণে পাথরটি কয়েক টুকরো হয়ে গিয়েছিল, যা বর্তমানে বিশেষ আঠার মাধ্যমে একসাথে যুক্ত রাখা হয়েছে।

অবস্থান: এটি কাবার ভূমি থেকে প্রায় ১.৫ মিটার (প্রায় ৫ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত।

একটি বিশেষ দ্রষ্টব্য: মুসলিমরা হাজরে আসওয়াদকে পূজা করে না। এটি একটি সম্মানজনক নিদর্শন মাত্র। হযরত উমর (রা.) বলেছিলেন— "আমি জানি তুমি কেবল একটি পাথর, উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা তোমার নেই। আমি যদি আল্লাহর রাসূল (সা.)-কে তোমাকে চুম্বন করতে না দেখতাম, তবে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না।"

হাজরে আসওয়াদ নিয়ে আরও কিছু চমৎকার তথ্য এবং এর ফজিলত (মর্যাদা) নিচে তুলে ধরা হলো:

হাজরে আসওয়াদের বিশেষ ফজিলত

ইসলামী শরিয়তে এই পাথরের বেশ কিছু আধ্যাত্মিক গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে:

পাপ মোচনকারী: হাদিসে বর্ণিত আছে যে, হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা গুনাহসমূহকে মুছে দেয়।

কিয়ামতের দিন সাক্ষী: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা এই পাথরটিকে দু’টি চোখ এবং একটি জিহ্বা দিয়ে পুনরুত্থিত করবেন। পাথরটি তখন ওই ব্যক্তিদের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে, যারা ঈমানের সাথে এটি স্পর্শ বা চুম্বন করেছিল।

জান্নাতের অংশ: এটি সরাসরি জান্নাত থেকে আসা একটি বস্তু, যা দুনিয়াতে জান্নাতের উপস্থিতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

পাথরটি কালো হওয়ার কারণ

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

"হাজরে আসওয়াদ যখন জান্নাত থেকে অবতীর্ণ হয়, তখন তা দুধের চেয়েও সাদা ছিল। অতঃপর বনী আদমের (মানুষের) পাপরাশি তাকে কালো করে দিয়েছে।" (তিরমিজি: ৮০৭)

এটি মানুষের অন্তরের কলুষতা এবং পাপের গভীরতাকে ইঙ্গিত করে।

ইতিহাসের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা

হাজরে আসওয়াদকে ঘিরে ইতিহাসে অনেক নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে:

১. কারামাতিদের আক্রমণ: ৩১৭ হিজরিতে (৯৩০ খ্রিস্টাব্দে) বাহরাইনের কট্টরপন্থী 'কারামাতি' সম্প্রদায় মক্কায় হামলা চালিয়ে হাজরে আসওয়াদ চুরি করে নিয়ে যায়। তারা প্রায় ২২ বছর পাথরটি নিজেদের কাছে আটকে রেখেছিল। পরবর্তীতে চড়া মূল্যের বিনিময়ে এবং আব্বাসীয় খলিফাদের হস্তক্ষেপে তা পুনরায় কাবায় ফিরিয়ে আনা হয়। ২. পাথরটি টুকরো হওয়া: কারামাতিদের সেই হামলা এবং বিভিন্ন সময়ের প্রাকৃতিক দুর্যোগ (যেমন আগুন ও বন্যা)-এর কারণে মূল পাথরটি এখন আটটি ছোট ছোট টুকরোতে বিভক্ত। এই টুকরোগুলোকেই বর্তমানে একটি রুপার ফ্রেমে বিশেষ মোমের সাহায্যে ধরে রাখা হয়েছে। ৩. আবদুল্লাহ বিন জুবাইর (রা.)-এর সময়: একবার কাবার গিলাফে আগুন লেগে পাথরটি ফেটে গিয়েছিল। তখন হযরত আবদুল্লাহ বিন জুবাইর (রা.) প্রথম রুপার ফ্রেম দিয়ে এটি বাঁধাই করেন যাতে পাথরটি সুরক্ষিত থাকে।

কেন আমরা এটি স্পর্শ বা চুম্বন করি?

এটি কোনো পাথর পূজা নয়, বরং এটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা এবং আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ। হজ বা উমরার সময় তাওয়াফের শুরুতে একে চুম্বন করা বা স্পর্শ করাকে 'ইস্তিলাম' বলা হয়। যদি ভিড়ের কারণে স্পর্শ করা সম্ভব না হয়, তবে হাত দিয়ে ইশারা করলেও সুন্নাত আদায় হয়ে যায়।

হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা বা ইশারা করার মাধ্যমে তাওয়াফ শুরু করতে হয়। ভিড়ের কারণে সরাসরি চুম্বন করা সম্ভব না হলে সহজ কিছু নিয়ম রয়েছে। নিচে এর সঠিক নিয়ম ও দোয়া তুলে ধরা হলো:

হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের নিয়ম (ইস্তিলাম)

হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা বা চুম্বন করাকে শরীয়তের ভাষায় ‘ইস্তিলাম’ বলা হয়। এটি করার তিনটি পদ্ধতি রয়েছে:

১. সরাসরি চুম্বন: যদি সম্ভব হয়, তবে পাথরের ওপর মুখ রেখে আলতোভাবে চুম্বন করা। পাথর স্পর্শ করার সময় শব্দ করে চুমু খাওয়া উচিত নয়। ২. হাত দিয়ে স্পর্শ করা: যদি ভিড়ের কারণে মুখ লাগানো সম্ভব না হয়, তবে হাত দিয়ে পাথরটি স্পর্শ করে সেই হাতে চুমু খাওয়া। ৩. ইশারা করা (সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি): যদি পাথর পর্যন্ত পৌঁছানো অসম্ভব হয় (যা সাধারণত ভিড়ের সময় হয়), তবে পাথরের দিকে মুখ করে দুই হাত কানের লতি পর্যন্ত তুলে হাতের তালু পাথরের দিকে মেলে ধরা। এরপর নিজের তালুতে চুম্বন না করে শুধু ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করা।

তাওয়াফ শুরুর দোয়া

হাজরে আসওয়াদ বরাবর দাঁড়িয়ে তাওয়াফ শুরু করার সময় এই দোয়াটি পড়তে হয়:

আরবি: بِسْمِ اللهِ وَاللهُ أَكْبَرُ، اَللَّهُمَّ إِيمَانًا بِكَ وَتَصْدِيقًا بِكِتَابِكَ، وَوَفَاءً بِعَهْدِكَ، وَاتِّبَاعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার। আল্লাহুম্মা ঈমানান বিকা ওয়া তাসদিকান বিকিতাবিকা, ওয়া ওয়াফাআন বি-আহদিকা, ওয়াত্তিবাআন লিসুন্নাতি নাবিয়্যিকা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং আল্লাহই সবচেয়ে মহান। হে আল্লাহ! আপনার প্রতি ঈমান রেখে, আপনার কিতাবের প্রতি বিশ্বাস রেখে, আপনার অঙ্গীকার পূর্ণ করতে এবং আপনার নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নাতের অনুসরণ করে (আমি তাওয়াফ শুরু করছি)।

হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা বা ইশারা করার মাধ্যমে তাওয়াফ শুরু করতে হয়। ভিড়ের কারণে সরাসরি চুম্বন করা সম্ভব না হলে সহজ কিছু নিয়ম রয়েছে। নিচে এর সঠিক নিয়ম ও দোয়া তুলে ধরা হলো:

হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের নিয়ম (ইস্তিলাম)

হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা বা চুম্বন করাকে শরীয়তের ভাষায় ‘ইস্তিলাম’ বলা হয়। এটি করার তিনটি পদ্ধতি রয়েছে:

১. সরাসরি চুম্বন: যদি সম্ভব হয়, তবে পাথরের ওপর মুখ রেখে আলতোভাবে চুম্বন করা। পাথর স্পর্শ করার সময় শব্দ করে চুমু খাওয়া উচিত নয়। ২. হাত দিয়ে স্পর্শ করা: যদি ভিড়ের কারণে মুখ লাগানো সম্ভব না হয়, তবে হাত দিয়ে পাথরটি স্পর্শ করে সেই হাতে চুমু খাওয়া। ৩. ইশারা করা (সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি): যদি পাথর পর্যন্ত পৌঁছানো অসম্ভব হয় (যা সাধারণত ভিড়ের সময় হয়), তবে পাথরের দিকে মুখ করে দুই হাত কানের লতি পর্যন্ত তুলে হাতের তালু পাথরের দিকে মেলে ধরা। এরপর নিজের তালুতে চুম্বন না করে শুধু ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করা।


তাওয়াফ শুরুর দোয়া

হাজরে আসওয়াদ বরাবর দাঁড়িয়ে তাওয়াফ শুরু করার সময় এই দোয়াটি পড়তে হয়:

আরবি: بِسْمِ اللهِ وَاللهُ أَكْبَرُ، اَللَّهُمَّ إِيمَانًا بِكَ وَتَصْدِيقًا بِكِتَابِكَ، وَوَفَاءً بِعَهْدِكَ، وَاتِّبَاعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার। আল্লাহুম্মা ঈমানান বিকা ওয়া তাসদিকান বিকিতাবিকা, ওয়া ওয়াফাআন বি-আহদিকা, ওয়াত্তিবাআন লিসুন্নাতি নাবিয়্যিকা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং আল্লাহই সবচেয়ে মহান। হে আল্লাহ! আপনার প্রতি ঈমান রেখে, আপনার কিতাবের প্রতি বিশ্বাস রেখে, আপনার অঙ্গীকার পূর্ণ করতে এবং আপনার নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নাতের অনুসরণ করে (আমি তাওয়াফ শুরু করছি)।


কিছু জরুরি সতর্কতা

অন্যকে কষ্ট না দেওয়া: হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা সুন্নাত, কিন্তু অন্য মুসলিমকে ধাক্কা দেওয়া বা কষ্ট দেওয়া হারাম। ভিড়ের মধ্যে জোর করে সামনে গিয়ে অন্যের ক্ষতি করা গুনাহের কাজ।

শান্ত থাকা: পাথর স্পর্শ করার সময় বা ইশারা করার সময় উত্তেজিত না হয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে কাজটি করা উচিত।

ইশারার নিয়ম: ইশারা করার সময় পাথর বরাবর সোজা দাঁড়িয়ে দুই হাত হাতের তালু মেলে দিতে হয়, যেন আপনি পাথরটি স্পর্শ করছেন। এরপর তাওয়াফ শুরু করতে হয়।